top of page

“বাংলার বাঘ” আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-কেমন ছিল তার জীবন যাত্রা ?

  • Writer: Debjoyti Ghosh
    Debjoyti Ghosh
  • Jun 29
  • 2 min read

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় যাঁকে ভালোবেসে বলা হতো "বাংলার বাঘ":

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী সংগঠক, আইনজ্ঞ এবং বাঙালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। তাঁর জীবন ছিল নিরন্তর সাধনা এবং জ্ঞান আহরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।১৮৬৪ সালের ২৯শে জুন কলকাতার ভবানীপুরে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা ডা. গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও পন্ডিত। ছোটবেলা থেকেই আশুতোষ অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এ. পাশ করেন। এরপর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং আইনশাস্ত্রেও তিনি অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।মাত্র ২২ বছর বয়সে রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবরা-র ফেলো নির্বাচিত হন—এই কৃতিত্ব সেই সময়ে বিরল।এবং মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি গণিতে ডি.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন, যা সেই সময়ে এক বিরল কৃতিত্ব ছিল।


শিক্ষকতা এবং সংস্করণ এ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর ভূমিকা :

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকার বলা হয়। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন এবং টানা আট বছর এই পদে নিযুক্ত ছিলেন ।

তাঁর উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধুমাত্র পরীক্ষার কেন্দ্র না রেখে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র করে তোলেন।তাঁর হাত ধরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা শুরু হয়, যা পূর্বে উপেক্ষিত ছিল। তিনি জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সি. ভি. রমন-এর মতো প্রীতিভাবান শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন।তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস, এবং ক্যালকাটা ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি

আইনজীবী ও বিচারপতির ভূমিকায় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়:

শুধু গণিতে নয়, আইনেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।গণিতে এম.এ সম্পূর্ণ করার পর আইনি শিক্ষা লাভ করেন।এলএল.বি ও এলএল.ডি ডিগ্রি লাভ করে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।১৯০৩ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হন এবং বহুবার প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।তাঁর রচিত প্রায় ২০০০-এর বেশি রায় আজও ভারতের আইনি পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। তাঁর আইন জ্ঞান ও ন্যায়পরায়ণতা তাঁকে সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছিল।


প্রতিষ্ঠা ও সম্মান:

১৯১৬ সালে তিনি সাউথ সাবার্বান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে তাঁর নামে আশুতোষ কলেজ নামে পরিচিত হয়।১৯১১ সালে নাইট উপাধি এবং ১৯০৯ সালে CSI খেতাব পান।তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রায় এক লক্ষ বই আজও ন্যাশনাল লাইব্রেরি-তে সংরক্ষিত।আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন স্পষ্টভাষী, নীতিবান ও কর্মনিষ্ঠ। তিনি কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাস করতেন। তবে তিনি কিছু সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচিতও হন—যেমন ১৯১৬ সালে নারীদের আইনজীবী পেশায় প্রবেশে বিরোধিতা করেন, যা সময়ের প্রেক্ষিতে বিতর্কিত।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন আপাদমস্তক একজন বাঙালি। তিনি সর্বদাই বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বাংলা ভাষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার প্রসারেও তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তিনি অনুভব করতেন, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে কোনো জাতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়।তার অসাধারণ দৃহচ্ছেতা মন,নির্ভীকতা,আপোষহীন মনোভাবের কারণে তাকে অভিহিত করা হতো “বাংলার বাঘ” আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ।১৯২৫ সালের ২৫শে মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেও, তাঁর কর্ম ও আদর্শ আজও আমাদের পথ দেখিয়ে চলেছে।


Comments


bottom of page