Bhagat Singh:ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের তরুণ শহীদ ভগত সিংহ
- Debjoyti Ghosh
- Jul 2
- 2 min read

Bhagat Singh:ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের তরুণ শহীদ ভগত সিংহ আমরা “শহীদ-ই-আজম” নামে জানি, অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। নামটি শুনলেই মনে পড়ে আসে অদম্য সাহস, জ্বলন্ত আদর্শবাদ এবং চূড়ান্ত আত্মত্যাগের ছবি।তরুণ বয়সে তাঁর সাহসিকতা, আদর্শবাদ, ও আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন প্রাণসঞ্চার করেছিল।তিনি শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামই নয় তিনি ছিলেন একজন স্বপ্ন দেখানোর মানুষ যিনি ভারতীয় দের মনে স্বাধীনতার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ছিলেন এত অল্প বয়স এই।১৯০৭ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের (বর্তমান পাকিস্তানে) লায়লপুর জেলার বঙ্গা গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলেন যারা দেশপ্রেম ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন।ভগত সিংহের পিতার নাম ছিল কিশন সিংহ। তিনি নিজেও একজন দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। কিশন সিংহ আর্য সমাজের সদস্য ছিলেন এবং ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর প্রভাবেই ভগত সিংহ ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেম ও বিপ্লবী চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন।ভগত সিংহের পরিবারে দেশপ্রেম যেন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটি গুণ ছিল।মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেন, যা তাঁর মনে ব্রিটিশবিরোধী চেতনার জন্ম দেয়।প্রথমদিকে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হলেও, সিং শেষ পর্যন্ত অহিংস প্রতিরোধের গতি এবং পদ্ধতির প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নড়াতে হলে আরও আমূল পদ্ধতির প্রয়োজন। তিনি হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন (HRA)-এ যোগ দেন, যা পরে তিনি হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন (HSRA) নামকরণ করতে সাহায্য করেন, যা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি তার ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।তাঁর লক্ষ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক আদর্শের মাধ্যমে একটি স্বাধীন, শোষণহীন ভারত গঠন।
বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা লালা লাজপত রায় পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে মারা যাওয়ার পর, ভগত সিং, শিভারাম রাজগুরু এবং চন্দ্রশেখর আজাদের সাথে মিলে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন পি. স্যান্ডার্সকে ভুলবশত হত্যা করেন ১৯২৮ সালে।
১৯২৯ সালে, ভগত সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান—কিন্তু তা ছিল প্রতীকী প্রতিবাদ। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল আত্মসমর্পণ করে আদালতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেই লড়াই করা।কার্যকরভাবে আদালতকে তাদের বিপ্লবী মতাদর্শের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেন।জেলে থাকা কালীন তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য উন্নত আচরণের দাবিতে ১১৬ দিনের অনশন করেন, এই কাজটি ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করে এবং ভারতীয় বন্দীদের মুখোমুখি অমানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরে। তিনি জেল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও দার্শনিক প্রবন্ধ লেখেন, যার মধ্যে "আমি নাস্তিক কেন?" (Why I Am an Atheist) আজও আলোচ্য।

১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ, মাত্র ২৩ বছর বয়সে, ভগত সিং, রাজগুরু এবং সুখদেবের সাথে ব্রিটিশদের হাতে ফাঁসিতে ঝুলে শহিদ হন। তাদের শাহাদাত সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রতীক হিসাবে তাদের স্থানকে দৃঢ় করে এবং আরও অসংখ্য মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে।
ভগত সিংয়ের রণহুঙ্কার, "ইনকিলাব জিন্দাবাদ!", ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের স্লোগানে পরিণত হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃত স্বাধীনতা মানে সবার জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি, বিশেষ করে কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য, এবং জমিদারী প্রথা ও পুঁজিবাদের বিরোধিতা করতেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ ভারত।তিনি তরুণদের সক্রিয়ভাবে তাদের জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে অংশ নিতে , অবিচারকে চ্যালেঞ্জ করতে এবংকর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতেন।মহান শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, যার আত্মা আজও একটি মুক্ত এবং সমতাপূর্ণ ভারতের দিকে পথ আলোকিত করে চলেছে।
জয় হিন্দ ! বন্দে মাতারাম ! ইনক্লাব জিন্দাবাদ !
Comments