Fatty Liver: ফ্যাটি লিভার এর শিকার ভারতের প্রায় মানুষ তা থেকে নিজেকে বাঁচান
- an Author
- Jul 7
- 3 min read

Fatty Liver বা ফ্যাটি লিভার রোগ, যাকে আজকাল প্রায়শই মেটাবলিক ডিসফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্টেটোসিক লিভার ডিজিজ (MASLD) বলা হয়, বিশ্বজুড়ে একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য উদ্বেগ, এবং ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায়শই এটিকে "নীরব রোগ" বলা হয় কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তবে যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি আরও গুরুতর পরিস্থিতিতে যেমন প্রদাহ, ক্ষত (ফাইব্রোসিস), সিরোসিস এবং এমনকি লিভার ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।ফ্যাটি লিভার বা হেপাটিক স্টিয়াটোসিস (Hepatic Steatosis) এখন ভারতে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং অলস জীবনধারার কারণে বহু মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। অনেকেই জানেন না যে তাদের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমেছে, যতক্ষণ না সেটি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছায়। ফ্যাটি লিভার এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনার লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়।সাধারণভাবে লিভারে কিছুটা ফ্যাট থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু যদি তা মাত্রাতিরিক্ত হয়, তাহলে তা লিভারের প্রদাহ, ক্ষয় এবং পরবর্তীতে সিরোসিস-এর কারণ হতে পারে।
Fatty Liver বা ফ্যাটি লিভারের দুই ধরণ:
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) / MASLD: এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, যা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয় না। এটি স্থূলতা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো আধুনিক জীবনযাত্রার কারণগুলির সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD): নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই প্রকারটি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়।
আপনার কি ঝুঁকি আছে? যে লক্ষণগুলি খেয়াল রাখবেন
ফ্যাটি লিভার প্রায়শই অলক্ষিত থেকে যায় কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলি সূক্ষ্ম বা অনুপস্থিত থাকে। তবে, রোগ বাড়ার সাথে সাথে আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেন:
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা অলসতা: বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি না কমা।
উপরের ডান পেটে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি: পাঁজরের নিচে ডানদিকে একটি হালকা ব্যথা বা ভরা ভরা ভাব।
অকারণ ওজন হ্রাস:বিনা ব্যায়াম বা মেডিসিন ছাড়াই শরীর ওজন কমে যাওয়া।
দুর্বলতা:শরীরে দুর্বলতার আবির্ভাব ।
আরও উন্নত পর্যায়ে, লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:ত্বক ও চোখের হলুদ ভাব (জন্ডিস),পেট (অ্যাসাইটিস) বা পায়ে ফোলা ভাব,ত্বকের কালো হয়ে যাওয়া (হাইপারপিগমেন্টেশন),লালচে তালু,সহজেই কালশিটে পড়া।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির কোনোটি লক্ষ্য করেন, অথবা যদি আপনার ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো ঝুঁকির কারণ থাকে, তবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য রক্ত পরীক্ষা, ইমেজিং (যেমন আল্ট্রাসাউন্ড), বা কিছু ক্ষেত্রে লিভার বায়োপসি প্রয়োজন হতে পারে।
ভারতে ফ্যাটি লিভার বাড়ছে কেন?
ভারতের আধুনিক জীবনে কিছু পরিবর্তনের কারণে এই রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে:
বসে বসে কাজ করা
ক্যালরি ও চিনি সমৃদ্ধ খাবারের আধিক্য
ব্যায়ামের অভাব
ডায়াবেটিস ও স্থূলতার পরিমাণ বৃদ্ধি
তরুণদের মধ্যে অ্যালকোহল সেবনের প্রবণতা
কীভাবে ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করবেন?
নিচের উপায়গুলো অবলম্বন করলে আপনি সহজেই ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন:
1. লিভার-বান্ধব খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন
খাবার তালিকায় রাখুন:
ফল এবং সবজি: এগুলিকে আপনার খাদ্যের মূল ভিত্তি করুন, বিশেষ করে অ-স্টার্চি সবজি যেমন পালং শাক, ব্রোকলি, গাজর এবং ক্যাপসিকাম। প্রতিদিন ৪-৫ পরিবেশন করার চেষ্টা করুন। জুসের পরিবর্তে আস্ত ফল বেছে নিন।
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার: গোটা শস্য (বাদামী চাল, ওটস, কুইনোয়া), ডাল (মসুর, ছোলা, রাজমা) এবং বাদাম ফাইবারের চমৎকার উৎস, যা হজমে সহায়তা করে এবং লিভারের বোঝা কমায়।
চর্বিহীন প্রোটিন: মাছ (বিশেষ করে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ তৈলাক্ত মাছ যেমন স্যামন এবং সার্ডিন), মুরগির মাংস, মটরশুঁটি এবং মসুর ডাল।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং বীজ (ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড) এর মতো উৎস থেকে স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করুন।
কফি: গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কফি পান লিভারের এনজাইম কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হলুদ এবং রসুন: এই সাধারণ ভারতীয় রন্ধনশালায় ব্যবহৃত উপাদানগুলি তাদের প্রদাহ-বিরোধী এবং লিভার-রক্ষাকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
এড়িয়ে চলুন:
চিনিযুক্ত পানীয় ও মিষ্টি (রসগোল্লা, সফট ড্রিংকস)
ময়দা জাতীয় ও ফাস্ট ফুড
ভাজা খাবার (সিঙ্গারা, পকোড়া, চিপস)
লাল মাংস ও ফুল ফ্যাট দুধ
2. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন ৩০–৪৫ মিনিট হাঁটা, যোগ বা সাইক্লিং করুন
সপ্তাহে ২–৩ দিন হালকা ওজন তোলা ব্যায়াম করলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে
সূর্য নমস্কার ও কপালভাতি বিশেষ উপকারী
3. অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল ফ্যাটি লিভারকে দ্রুত খারাপ করে তোলে। তাই ডাক্তার পরামর্শ দিলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করুন।
4.মানসিক চাপ কমান
চাপের কারণে কর্টিসল হরমোন বেড়ে লিভারে চর্বি জমা বাড়ে। তাই:
ধ্যান করুন
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
পর্যাপ্ত ঘুম নিন (৭–৮ ঘণ্টা)
5. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে, ডাক্তার আপনাকে দিতে পারেন:
লিভার ফাংশন টেস্ট
কিছু ঔষধ (যেমন: ভিটামিন ই)
রেগুলার মনিটরিং
ভেষজ সহায়তা:
মিল্ক থিসল (সিলিমারিন): এর লিভার-রক্ষাকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
হলুদ (কারকিউমিন): শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
ভূমি আমলা (Phyllanthus niruri): ঐতিহ্যগতভাবে আয়ুর্বেদে লিভার পরিষ্কার এবং প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
গুডুচি (Tinospora cordifolia): রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লিভারের ডিটক্সিফিকেশনে সহায়তা করে।
ত্রিপলা: একটি ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এবং হজম উন্নত করে।
Comments