top of page

Khudiram Bose:যিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন দেশের জন্য—তিনি হলেন শহীদ খুদিরাম বসু

  • an Author
  • Jul 7
  • 2 min read
Portrait of a young man with short hair in a white shirt, set against a beige background. Text above reads "KHUDIRAM BOSE".

Khudiram Bose:ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অনেক বীরের নাম লেখা আছে সোনার অক্ষরে। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন দেশের জন্য—তিনি হলেন শহীদ খুদিরাম বসু। তাঁর সাহস, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও যুবসমাজের অনুপ্রেরণা।

জন্ম ও শৈশব:ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী। তিন মেয়ের পর তিনি ছিলেন একমাত্র ছেলে। তাঁর জন্মের পরপরই মা-বাবাকে হারানোর পর তিনি দিদি অপরূপা দেবীর কাছে বড় হন।ছোটবেলা থেকেই ক্ষুদিরাম ছিলেন প্রতিবাদী ও নির্ভীক। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি তাঁর মনে তীব্র ঘৃণা ছিল। স্কুলের পড়া শেষ না করেই তিনি বিপ্লবী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। মেদিনীপুরের বিপ্লবী নেতা সত্যেন বসুর প্রভাবে তিনি যুগান্তর দলে যোগ দেন এবং মেদিনীপুর অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন।

বিপ্লবী জীবনে পদার্পন:ক্ষুদিরামের বিপ্লবী জীবন ছিল কর্মচঞ্চল। তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোপন কার্যকলাপে অংশ নিতেন। ১৯০৬ সালে তিনি মেদিনীপুরের শিল্প প্রদর্শনীতে একটি রাজনৈতিক ইশতেহার বিলি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। যদিও সে যাত্রায় তিনি ছাড়া পেয়ে যান, তবে এটি ছিল তাঁর বিপ্লবী জীবনের একটি সূচনা মাত্র।

আলিপুর বোমা মামলা:১৯০৮ সালে ক্ষুদিরামের জীবনে এক মোড় আসে। ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড তখন মুজাফফরপুরের জেলা জজ ছিলেন। এর আগে কিংসফোর্ড কলকাতায় থাকাকালীন বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক নিরপরাধ ভারতীয়কে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ বিপ্লবীরা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকীকে।১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী কিংসফোর্ডের গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন মুজাফফরপুরের ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে। তারা একটি গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি কিংসফোর্ডের গাড়ি ছিল না। গাড়িতে থাকা দুই ইংরেজ মহিলা, মিসেস ও মিস কেনেডি, নিহত হন।এই ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যা করেন, কিন্তু ক্ষুদিরাম প্রায় ২৫ মাইল হেঁটে যাওয়ার পর ওয়াইনি রেলস্টেশনে ধরা পড়েন।

আদালতে হাজির এবং শাস্তি:ক্ষুদিরামকে মুজাফফরপুর জেলে রাখা হয় এবং তাঁর বিচার শুরু হয়। এই বিচার ইতিহাসে আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত। বিচারে ক্ষুদিরামের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কালীদাস বসু, উপেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী। পরবর্তীতে আইনজীবী নরেন্দ্র কুমার লাহিড়ী এবং কুলকমল সেনও যোগ দেন।আইনজীবীরা ক্ষুদিরামকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯০৮ সালের ১৩ জুন তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। এরপর ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ১১ দিন বয়সে ক্ষুদিরাম বসুকে মুজাফফরপুর জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়।


ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় তাঁর মুখে কোনো ভয় ছিল না, ছিল এক অদ্ভুত দৃঢ়তা এবং হাসি। তিনি নির্ভীকচিত্তে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন।


শহীদ খুদিরাম বসু ছিলেন না শুধু একজন কিশোর বিপ্লবী, তিনি ছিলেন দেশপ্রেমের প্রতীক। তাঁর মতো সাহস ও আদর্শ আজকের প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলতে পারে।ক্ষুদিরাম বসু প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বয়সের কোনো সীমা নেই, প্রয়োজন শুধু অদম্য সাহস আর আত্মত্যাগের মানসিকতা।তাঁর আত্মবলিদান ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এক নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়। তাঁকে ঘিরে অজস্র গান, কবিতা, এবং লোককাহিনী রচিত হয়। বাংলার ঘরে ঘরে ক্ষুদিরামের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হতে থাকে। তিনি হয়ে ওঠেন ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের এক তরুণ প্রতীক। তাঁর নির্ভীকতা এবং আত্মত্যাগ আজও ভারতের কোটি কোটি মানুষকে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে।


"একটি হাসি, একটি বিশ্বাস, একটি মৃত্যু – তবুও এক মহাকাব্যের জন্ম। সে খুদিরাম।"


Comments


bottom of page