Rainbow tree:(Eucalyptus deglupta)বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন গাছ
- an Author
- Jul 2
- 3 min read

Rainbow tree বা বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন গাছ Eucalyptus deglupta বা রেইনবো ইউক্যালিপটাস:
মানুষকে অবাক করার সুযোগ প্রকৃতি কখনোই হাতছাড়া করে না সেটা প্রমাণিত হয় এই রামধনু রঙের ইউক্যালিপটাস গাছ দেখে। বিশ্বের সবচেয়ে রঙিন গাছ বা Rainbow tree বলা হয় এই রেইনবো ইউক্যালিপটাস বা Eucalyptus deglupta গাছকে। এই গাছটির বিশেষত্বই হলো এর বাকল বা গুড়ির রং যা দেখতে একেবারে রামধনুর মত সবুজ, নীল ,বেগুনি, কমলা ও বাদামি। নানা রঙের ছোঁয়ায় গাছটির গুঁড়ি যেন একজন শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা ক্যানভাস।
বৈজ্ঞানিক নাম: Eucalyptus deglupta
পরিবার: Myrtacese
সাধারণ নাম: Rainbow Eucalyptus, Painted Gum Tree, Middanao Gumবাংলা অনুবাদে: রেনবো গাছ বা রামধনু গাছ
উদ্ভব ও বিস্তার:
এই গাছটির আদি নিবাস হল ফিলিপাইন (বিশেষ করে মেন্ডানো দ্বীপ), নিউগিনি, সুলাওয়েসি এবং ইন্দোনেশিয়া (মালুক দ্বীপপুঞ্জ)। তবে এখন এটি নানা দেশে সৌন্দর্যের জন্য লাগানো হচ্ছে যেমন হাওয়ায়, ফ্লোরিডা (যুক্তরাষ্ট্র), মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ ভারত। ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় এই গাছটির সম্পর্কে খবর এসেছে, বিশেষ করে Forest Research Institute-এ এক বা দুটি গাছ দেখা গেছে। গ্রীষ্ম প্রধান ও আদ্র জলবায়ুতে এই গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। প্রাকৃতিকভাবে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায় আদ্র বনভূমিতে বৃদ্ধি পায়।
গাছের আকৃতি ও বৃদ্ধি:
উচ্চতা: ২০০ থেকে ২৫০ ফুট (৬০ - ৭৫ মিটার) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে তবে বাগানে বা শোভামূলকভাবে লাগালে সাধারণত ৭০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়।
ব্যাস: ২ থেকে ৩ মিটার গড় ব্যাস হতে পারে।
বৃদ্ধির গতি: খুব দ্রুত বর্ধনশীল গাছ।
রেইনবো ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus deglupta) গাছের পাতা, ফুল, ফল, বীজ:
১. পাতা (Leaf):
আকৃতি: পাতাগুলো লম্বাটে ও ল্যান্স-আকৃতির অর্থাৎ দুই প্রান্ত সরু এবং মাঝখানে চওড়া।
আকার: সাধারণত দৈর্ঘ্য ৭.৫ -১৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ২-৫ সেন্টিমিটার
রঙ: গাঢ় সবুজ, মসৃণ, চকচকে এবং সুগন্ধযুক্ত
গঠন: পাতাগুলো একক ও বিপরীতভাবে ডালে গজায়। পাতা থেকে ইউক্যালিপটাস তেলের মতো সুগন্ধ বের হয়।
২. ফুল (Flower):
রঙ: হালকা সবুজাভ-সাদা বা সাদা-হলুদ।
আকৃতি ও গঠন: ফুলগুলো ছোট, সুগন্ধহীন এবং গোচ্ছাকারে ফোটে। প্রতিটি গুচ্ছে ৩-৭ টি পর্যন্ত ফুল থাকে।
বৈশিষ্ট্য: ইউক্যালিপটাস ফুলে পাপড়ি থাকে না, বরং অনেকগুলো সুতোয় ভরা থাকে যা ফুলকে ঝুলন্ত তুলার মত দেখায়। সাধারণত উষ্ণ ও আদ্র সময়ে ফুল ফোটে, গ্রীষ্মের শুরু বা বর্ষার শুরুতে।
৩. ফল (Fruit):
আকৃতি: ফল ক্যাপসুল আকৃতির, ছোট এবং গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি।
আকার: প্রায় ১ সেন্টিমিটার দীর্ঘ, শক্ত খোলসবিশিষ্ট।
রঙ: প্রথমে সবুজ পরে বাদামি বা ধূসর হয়ে যায়।
৪. বীজ (Seed):
আকার: বীজ অনেক ছোট, ধূলিকণার মতো।
রঙ: হালকা বাদামি
সংখ্যা: প্রতিটি ক্যাপসুলে ৩-১২ টি পর্যন্ত বীজ থাকে
বৈশিষ্ট্য: হালকা ও ওজনহীন বলে সহজেই বাতাসে উড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
অঙ্কুরোদগম: বীজ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরোদগম করতে পারে যদি মাটির আর্দ্র এবং উষ্ণ ভাব থাকে।
কেন এই গাছের ফল খাওয়া যায় না?
১. এর ফল ছোট, শক্ত, খোলসযুক্ত ও কাঠের মত শক্ত ক্যাপসুল আকারের হয়, যা মানুষের খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত নয়।২. এই গাছের বিভিন্ন অংশে অ্যাথেরিক তেল বা ইউক্যালিপ্টল নামক যৌগ থাকে, যা উচ্চমাত্রায় মানবদেহে ক্ষতিকর হতে পারে যেমন বমি, পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা এমনকি স্নায়ু সমস্যা হতে পারে।
কোন প্রাণী কি খেতে পারে এই ফল?হ্যাঁ, কিছু পোকামাকড় বা নির্দিষ্ট বন্যপ্রাণী হয়তো খেতে পারে।
রেইনবো ইউক্যালিপটাস গাছের রং পরিবর্তনের কারণ:
গাছের ছাল নিয়মিত পাতলা স্তরে খুলে পড়ে। পুরনো বাকোল ঝরে পড়ার পর নতুন বাকল বের হয়, যা প্রথমে উজ্জ্বল সবুজ থাকে। সময়ের সাথে সাথে এই নতুন অংশ ধীরে ধীরে বেগুনি, নীল, কমলা, সাদা এবং অবশেষে মারুন বা বাদামী রং ধারণ করে। ফলে গাছটি বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রঙের হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে তীব্র হয়।
ব্যবহার (Use of Rainbow Eucalyptus):
১. পার্ক, রিসোর্ট, উদ্যান বা বড় ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পে শোভামূলক গাছ হিসেবে২. এর কাঠ থেকে সেলুলোজ বের করে কাগজ তৈরি৩. কাঠ আসবাবপত্র, হালকা কাঠামো নির্মাণ বোর্ড ও প্যাকেজিং সামগ্রী৪. জীবাণুনাশক হিসেবে৫. পাতার বাষ্প সর্দি বা নাক বন্ধে৬. অনেক পরিমাণে কার্বন শোষণ
সতর্কতা (Caution):
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে।
গাছের কাঠ নরম ও টেকসই কম হওয়ায় ভারী নির্মাণে ব্যবহার অনুচিত।
প্রচুর জল শোষণ করে, তাই জলের ঘাটতি আছে এমন এলাকায় না লাগানোই ভালো।
পোষা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।




Comments