top of page

history of Kolkata:তিলোত্তমার ইতিহাস,শহর নয় এক অনুভূতির গল্প

  • an Author
  • Jul 8
  • 3 min read
Vintage illustration of Kolkata history, featuring iconic buildings, a hand-pulled rickshaw, tram, and classic cars. Sepia-toned background.

কলকাতা, যাকে আমরা ভালোবেসে ‘সিটি অফ জয়’ বা ‘শহর তিলোত্তমা’ বলি, তার ইতিহাস যতটা বর্ণময়, ততটাই গভীর।কলকাতা, পূর্ব ভারতের হৃদয়স্থলে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক শহর, যা শুধুমাত্র বাংলার নয়, পুরো ভারতবর্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।গঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই শহরটি একসময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল এবং ভারতীয় সংস্কৃতি, শিক্ষা ও রাজনীতির পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। চলুন,অতীতের দিন থেকে দেখে আসি history of Kolkata.


তিনটি গ্রাম থেকে শহর তৈরির গল্প-

কলকাতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় জব চার্নকের কথা। ১৬৯০ সালের ২৪শে আগস্ট, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি জব চার্নক সুতানুটিতে আসেন এবং এখানে একটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন।সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কলকাতা – এই তিনটি গ্রামকে কেন্দ্র করেই আজকের কলকাতা শহরের জন্ম।১৭০০ সাল নাগাদ এই তিন গ্রাম একত্রিত হয়ে কলকাতা নাম ধারণ করে।

  • সুতানুটি: বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রধান কেন্দ্র।

  • গোবিন্দপুর: হিন্দু ব্রাহ্মণ ও জমিদারদের বসবাস।

  • কলিকাতা (Kalikata): মাছজীবী ও কুমোর সম্প্রদায়ের বসতি।

এই তিনটি গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল গঙ্গার পূর্বতীরে। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত মূলত নদীপথে। তখনকার দিনে হুগলি নদী ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথ।


ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন-

১৬৯০ সালে ব্রিটিশ অফিসার জব চারনক (Job Charnock) কলকাতার সুতানুটিতে নোঙর ফেলেন। যদিও জব চারনক-কে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে ব্রিটিশদের প্রভাব বাড়তে থাকে। কলকাতা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তারা এখানে একটি দুর্গ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ করা হয় এবং এটি ব্রিটিশদের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।তবে, ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ফোর্ট উইলিয়াম আক্রমণ করেন এবং দখল করে নেন। এই ঘটনা ‘ব্ল্যাক হোল ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত। পরের বছর, পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশরা সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে এবং আবারও কলকাতার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করে।

Historical battle scene with soldiers on horseback, cannons, and flags. Dense smoke fills the air. Vivid uniforms and dynamic tension.

তিলোত্তমার রাজধানী তে রূপান্তর এবং নবজাগরণের সূচনা-

পলাশীর যুদ্ধের পর কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষিত হয়। এরপরই শহরের দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের দিক থেকে কলকাতা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

  • শিক্ষা: ১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ (যা এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়), ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর কলেজ এবং ১৮৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কলকাতাকে শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করে।

  • সংস্কৃতি: ১৯শ শতকে কলকাতায় এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে, যা ‘বেঙ্গল রেনেসাঁ’ বা ‘বঙ্গীয় নবজাগরণ’ নামে পরিচিত। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ – এমন অনেক মহান ব্যক্তিত্বের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য, শিল্প, দর্শন এবং সমাজে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। কলকাতা এই সময়ে শিল্প, সাহিত্য ও বুদ্ধিজীবীতার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

  • স্থাপত্য: ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনেক নিদর্শন আজও কলকাতার আনাচে-কানাচে দেখতে পাওয়া যায়, যেমন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, রাইটার্স বিল্ডিং ইত্যাদি। এই ভবনগুলো শহরের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।

  •  শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রেস বিপ্লব:কলকাতা ছিল বাংলা মুদ্রণ ও সংবাদপত্রের সূতিকাগার।প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সংবাদ প্রভাকর,ইংরেজি সংবাদপত্র The Statesman, The Englishman পাবলিশ করা হয়।


কলকাতায় স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিপ্লব-

কলকাতা ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি।২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে কলকাতা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী – সহ অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এই শহরের মাটি থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দল এই দুটি বিপ্লবী সংগঠন ছিল সে সময়ের কলকাতার অতি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন দল।


বাংলার বিভাজন-

১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হবে। এর পেছনে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উভয় কারণই ছিল।১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়, কিন্তু সেই সঙ্গে বাংলাও বিভক্ত হয়। পূর্ব বাংলা (যা এখন বাংলাদেশ) এবং পশ্চিমবঙ্গ – এই বিভাজন কলকাতার ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায় যোগ করে।


১৯৪৭-পরবর্তী পরিবর্তন-

ভারতের স্বাধীনতার পর কলকাতা রাজনৈতিক রাজধানী না থাকলেও সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জনবসতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ থেকে যায়।

উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন:

  • শরণার্থী আগমন: ১৯৪৭-এর দেশভাগে বহু মানুষ পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে কলকাতায় আশ্রয় নেন।

  • কলকাতা মেট্রো (১৯৮৪): ভারতের প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবা।

  • সল্টলেক ও নিউটাউন শহরের আধুনিক রূপ।

Bustling street in Kolkata with people, rickshaws, and yellow cabs. Howrah Bridge looms in the background amid historic buildings.

আধুনিক কলকাতা: ঐতিহ্য ও পরিবর্তনের মেলবন্ধন

আজকের কলকাতা ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক সুন্দর মেলবন্ধন। শত শত বছরের ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে এই শহর আজও স্পন্দিত। সরু গলি থেকে সুউচ্চ অট্টালিকা, পুরনো স্থাপত্য থেকে নতুন মেট্রো রেল – সবকিছুই কলকাতার বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।

কলকাতার রসগোল্লা, ফুচকা, ট্রাম, হলুদ ট্যাক্সি – এসবই এই শহরের পরিচয়ের অংশ। এই শহরের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস আজও সমানভাবে প্রাণবন্ত। কলকাতা শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি ঐতিহ্য এবং একটি অবিরাম অনুপ্রেরণা এই সকল মেলবন্ধনে কলকাতা হয়ে উঠেছে THE CITY OF JOY



Comments


bottom of page